ওটস হলো একটি পুষ্টিকর খাদ্যশস্য। এতে আছে উচ্চ মাত্রার শর্করা। তাই এটি সকালে বা বিকেলের নাশতা হিসেবে শরীরে শক্তি যোগাতে কাজ করে। আবার এতে অধিক পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটি ধীরে ধীরে হজম হয়। এবং রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণকে সীমিত রাখে।
ওটস প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ ফলে এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। ওটস কোলেস্টরেলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, খিদে কমায় এবং পেট পরিষ্কার রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ওটস খেয়ে থাকেন তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অন্যদের তুলনায় ২৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওটস বেশ উপকারি। অনেকেই ওটস এর সাথে নানা রকমের তাঁজা ও শুকনো ফল আর মধু মিশিয়ে খেয়ে থাকেন। এছাড়া আরও হাজার রকম উপায়ে ওটস খাওয়া যায়। ওজন কমাতে চাইলে, সকালে এক বাটি ওটস এর সাথে টকদই, মধু এবং কয়েক ধরনের ফল মিশিয়ে খেলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
ওটস দিয়ে ফ্রাইড রাইস, স্যুপ, রুটি, স্মুদি, কেক এবং বিস্কুটসহ আরও অনেক ধরনের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বানানো যায়। এর বিভিন্ন খাবারের মধ্যে ওটস খিচুুড়ি অন্যতম। যারা অধিক ওজন বাড়িয়ে ফেলেছেন, তাদের এই সময় ডায়েটের মধ্যে এই পুষ্টিকর খাবারটি রাখা উচিত।
ভাত বা রুটির বদলে ওটসের খিচুড়ি প্রতিদিন খেলে ২ থেকে ৩ কেজি ওজন সপ্তাহের মধ্যে ঝরিয়ে ফেলতে পারবেন। এই খাবারে অতিরিক্ত ফাইবার যুক্ত হওয়ায় স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারি। চলুন, তাহলে জেনে নেয়া যাক কীভাবে তৈরি করবেন পুষ্টিকর এই ওটস খিচুড়ি।
ওটস খিচুড়ি তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- ওটস : ১/২ কাপ
- মেথি দানা : ২ চিমটি [প্রায় ১০-১২টি]
- আস্ত জিরা : ১/৪ চা চামচ
- সয়াবিন তেল : ১ টেবিল চামচ
- আদা কুচি : ১ চা চামচ
- রসুন কুচি : ১ চা চামচ
- পেঁয়াজ কুচি : ৩ টেবিল চামচ
- টমেটো কুচি : ১ টি [মাঝারি সাইজের]
- গাজর, পেপে, বরবটি, ফুলকপি, শিম কুচি : ১ কাপ
- মসুর ডাল : ১/৪ কাপ
- হলুদ গুঁড়া : ১/৪ চা চামচ
- পানি : ২ কাপ
- ধনে পাতা কুচি : ২ টেবিল চামচ
- কাঁচা মরিচ : স্বাদমতো
- লবণ : স্বাদমতো
ওটস খিচুড়ি তৈরি করবেন যেভাবে-
ওটস খিচুড়ি তৈরির জন্য, প্রথমে চুলায় একটি হাঁড়ি বসাতে হবে। এবার এতে ১ টেবিল চামচ সয়াবিন তেল দিতে হবে। এখানে সয়াবিন তেল এর পরিবর্তে অলিভ অয়েলও ব্যবহার করা যাবে।
এরপর আস্ত জিরা ১/৪ চা চামচ এবং সেই সাথে ২ চিমটি মেথির দানা অর্থাৎ প্রায় ১০-১২ টি দানা দিতে হবে। এখানে মেথি দেয়ার ফলে খিচুড়িতে সুন্দর একটা ফ্লেভার আসে, তবে কেউ পছন্দ না করলে বাদ দিতে পারেন। এখন এই সকল উপাদানকে ১-২ মিনিটের মত ভেঁজে নিতে হবে।
এরপর আদা কুচি ১ চা চামচ এবং রসুন কুচি ১ চা চামচ দিতে হবে। এখানে আদা কুচি ও রসুন কুচির পরিবর্তে আদা ও রসুন বাটা দেয়া যাবে। এবার পেঁয়াজ কুচি ৩ টেবিল চামচ ও স্বাদমতো কাঁচা মরিচ দিয়ে নেড়ে ছেড়ে এগুলো সামান্য ভেঁজে নিতে হবে।
যখন এগুলোর কালার সামান্য পরিবর্তন হবে, তখন মাঝারি সাইজের ১ টি টমেটো কুচি এবং গাজর, পেঁপে, বরবটি, ফুলকপি ও শিম কুচির মিক্স সবজি ১ কাপ দিতে হবে। এখানে নিজের পছন্দমত যেকোনো ধরনের সবজি ব্যবহার করা যাবে।
এরপর মসুর ডাল ১/৪ কাপ দিতে হবে। এখানে মসুর ডাল আগে থেকে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখতে হবে। এবার এতে হলুদ গুঁড়া ১/৪ চা চামচ এবং সেই সাথে ১/২ কাপ ওটস দিতে হবে। এই খিচুড়িতে মসলা খুবই কম ব্যবহার করা হয় তাই এটি অনেক স্বাস্থ্যকর । এরপর লবণ স্বাদমতো দিয়ে নেড়ে মিশিয়ে কিছুক্ষণ ভেঁজে নিতে হবে।
এবার ৪-৫ মিনিট ভাজার পর ২ কাপ পানি দিতে হবে। এখানে পানির পরিমাণ কম বেশি লাগতে পারে। যদি সিদ্ধ হওয়ার জন্য পানি প্রয়োজন হয়, তখন আরেকটু পানি দিতে হবে। এবার কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে যখন পানিতে বলক চলে আসবে, তখন নেড়ে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে চুলার আঁচ মিডিয়াম টু লোতে করে ২০ মিনিট রান্না করতে হবে।
এই ২০ মিনিটের মধ্যে পানি দিতে হবে যদি সিদ্ধ না হয় এবং কিছুক্ষণ পর পর নেড়ে দিতে হবে, যাতে নিচে লেগে না যায়। এবার ২০ মিনিট পর দেখা যাবে ওটস এর খিচুড়ি একে বারে নরম হয়ে গেছে। এবং ঠিক আমরা যেভাবে ভাত দিয়ে নরম খিচুড়ি তৈরি করি তার মত অনেকটা হবে।
এরপর খিচুড়িতে কিছু পানি থাকা অবস্থায় ২ টেবিল চামচ ধনিয়া কুচি দিয়ে একটু নেড়ে ছেড়ে বেশি ঘন না করে নামিয়ে ফেলতে হবে। কারণ খিচুড়ি ঠান্ডা হলে আরো একটু টেনে আসবে। তৈরি হয়ে গেল পুষ্টিকর ওটস খিচুড়ি। এবার চুলা থেকে নামিয়ে একটি প্লেটে গরম গরম ওটস খিচুড়ি পরিবেশন করুন।