ভুনা খিচুড়ি কম বেশি আমরা সবাই পছন্দ করি। আর সেটা যদি হয় আচারি চিকেন ভুনা খিচুড়ি, তাহলে তো কথাই নেই। বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি খেতে বেশি মন চায়। আর সেই খিচুড়ির সাথে যদি আচার ও মাংস যোগ হয়, তাহলে স্বাদটা আরো বেড়ে যায়।
এই ভুনা খিচুড়ি তৈরি করতে ঝামেলা কম। বেঁচে যাওয়া চিকেন বা বিফ ব্যবহার করে, এই ভুনা খিচুড়ি তৈরি করতে পারেন। চলুন, তাহলে জেনে নেয়া যাক কীভাবে তৈরি করবেন আচারি চিকেন ভুনা খিচুড়ি।
পড়তে পারেন: পুরান ঢাকার জনপ্রিয় চিকেন বটি কাবাব রেসিপির রেসিপি জেনে নিন
আচারি চিকেন ভুনা খিচুড়ি তৈরির প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- বাসমতী চাল : ২ কাপ
- চিকেন : ১ কেজি
- ভাঁজা মুগ ডাল : ১/২ কাপ
- মসুর ডাল : ১/৪ কাপ
- সরিষার তেল : ১/৩ কাপ
- এলাচ : ৩-৪ টি
- দারচিনি : ২ টুকরো
- লবঙ্গ : ৬-৭ টি
- গোল মরিচ : ১০-১২ টি
- আস্ত জিরা : ২ চিমটি
- শুকনো মরিচ : ২ টি
- তেজপাতা : ১ টি
- পেঁয়াজ কুচি : ১ কাপ
- আদা বাটা : ১/২ টেবিল চামচ
- রসুন বাটা : ১/২ টেবিল চামচ
- হলুদ গুঁড়া : ১/২ চা চামচ
- মরিচ গুঁড়া : ১ টেবিল চামচ
- জিরা গুঁড়া : ১ চা চামচ
- ধনিয়া গুঁড়া : ১ চা চামচ
- গরম মসলা গুঁড়া :১/২ চা চামচ
- আমের আচার : ১.৫০ টেবিল চামচ
- কাঁচা মরিচ : ৫-৬ টি
- মটরশুঁটি : পছন্দমতো
- কিসমিস : ৫-৬ টি
- পেঁয়াজ বেরেস্তা : পছন্দমতো
- গরম পানি : প্রয়োজনমতো
- ঘি : ১ টেবিল চামচ
- লবণ : স্বাদমতো
আচারি চিকেন ভুনা খিচুড়ি যেভাবে তৈরি করবেন –
আচারি চিকেন ভুনা খিচুড়ি তৈরির জন্য, প্রথমে একটি বড় বাটিতে ২ কাপ বাসমতী চাল নিতে হবে। এখানে বাসমতী চালের বদলে পোলাও এর চাল দেয়া যাবে। এরপর এতে ভাঁজা মুগ ডাল ১/২ কাপ এবং এর সাথে ১/৪ কাপ মসুর ডাল দিতে হবে। এখানে মুগ ডালকে আগে থেকে শুকনো তাওয়ায় ভেঁজে নিতে হবে ফ্লেভার বের হওয়া পর্যন্ত। এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন পুঁড়ে না যায়।
পড়তে পারেন: হোটেলের স্বাদে গরুর পায়া দিয়ে সুস্বাদু নেহারি রেসিপি জেনে নিন
এখন সবগুলো উপাদানকে একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর ভালোভাবে এই মিশ্রণটিকে ধুয়ে নিতে হবে ৬-৭ বার যাতে সব ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায়। এতে করে খিচুড়ি বেশ ঝরঝরে হবে। এরপর এই চাল ও ডাল এর মিশ্রণকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। এই চাল ও ডাল ভিজিয়ে রাখার ফলে খিচুড়ি ঝরঝরে হবে আর চাল লম্বা লম্বা হবে।
এখন খিচুড়ি রান্নার জন্য, মুরগির মাংস ছোট টুকরো করা ১ কেজি নিতে হবে। এখানে বয়লার মুরগির পরিবর্তে দেশী মুরগি দেয়া যাবে। এবার মাংস রান্নার জন্য, চুলার আঁচ মিডিয়ামে করে একটি পাত্র বসিয়ে ১/৩ কাপ সরিষার তেল দিতে হবে। যেহেতু আচারি চিকেন ভুনা খিচুড়ি, তাই এখানে সরিষার তেল ব্যবহার করতে হবে। তবে না থাকলে নরমাল তেলও দেয়া যাবে।
তেল যখন হালকা গরম হয়ে যাবে, তখন এর মধ্যে ফোঁড়ন গুলো দিতে হবে। যেমন :- এলাচ ৩-৪ টি, দারচিনি ২ টুকরো, লবঙ্গ ৬-৭ টি, গোল মরিচ ১০-১২ টি, আস্ত জিরা ২ চিমটি, শুকনো মরিচ ২টি এবং তেজপাতা ১টি দিয়ে নাড়তে হবে। এরপর এগুলোতে যখন ছোট ছোট বুদবুদ চলে আসবে তখন এতে পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ দিতে হবে। এখন মিডিয়াম আঁচে নেড়ে ছেড়ে হালকা বাদামী কালার করে ভাঁজতে হবে।
তবে এগুলো বেরেস্তার মতো মচমচে করা যাবে না। এরপর এতে হলুদ গুঁড়া ১/২ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ ও ধনিয়া গুঁড়া ১ চা চামচ দিতে হবে। এখানে প্রত্যেকটি মসলা দেয়ার সময় নেড়ে দিতে হবে। এখানে মরিচ নিজের স্বাদমতো কম বেশি করা যাবে। এটি যাতে পুঁড়ে না যায় এজন্য সামান্য পানি দিয়ে নেড়ে মিশিয়ে দিতে হবে।
এবার মসলাগুলো কিছু সময় ভাঁজার পর এরমধ্যে আদা বাটা ১/২ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১/২ টেবিল চামচ ও স্বাদমতো লবণ দিয়ে নেড়ে ছেড়ে কষাতে হবে। মসলাগুলো ভালোভাবে কষানোর জন্য এতে অল্প অল্প করে সামান্য পানি মেশাতে হবে যাতে মসলা পুঁড়ে না যায়। মসলা গুলো কষাতে কষাতে যখন মসলা থেকে তেল উপরে ওঠে আসবে এবং মসলার কালার পরিবর্তন হবে, তখন বুঝতে হবে কষানো হয়ে গেছে।
এবার এরমধ্যে কেটে ধুয়ে রাখা ১ কেজি মুরগির মাংস দিতে হবে। এবার মসলার সাথে নেড়ে ছেড়ে মিডিয়াম আঁচে ৩-৪ মিনিট কষিয়ে নিতে হবে। এরপর চুলার আঁচ কমিয়ে ঢাকনা দিয়ে ৫ মিনিটের জন্য কষিয়ে নিতে হবে। এরমধ্যে মাংস থেকে যতটা পানি বের হওয়ার বের হবে।
এবার ৫ মিনিট পর ঢাকনা তুলে নেড়ে দিতে হবে। এখানে অতিরিক্ত কোনো পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই, অল্প আঁচে এই মাংসের পানির মধ্যেই এটি রান্না করতে হবে ১০-১৫ মিনিট পর্যন্ত। এরপর দেখা যাবে এর কালার অনেকটা পাল্টে যাবে এবং মসলা অনেকটা ভাঁজা হবে।
তখন এরমধ্যে সবশেষে গরম মসলা গুঁড়া ১/২ চা চামচ দিয়ে নেড়ে ছেড়ে ঢাকনা দিয়ে ৩-৪ মিনিট রান্না করতে হবে। এবার ঢাকনা সরিয়ে দেখা যাবে মাংস রান্না হয়ে গেছে । এখন মাংস গুলোকে তেল থেকে তুলে নিতে হবে। এবং খেয়াল রাখতে হবে মাংস ও মসলার সাথে যাতে তেল উঠে না আসে। কারণ এই তেলের মধ্যে খিচুড়ি রান্না করা হবে।
এখন আধা ঘন্টা আগে ভিজিয়ে নেয়া চাল ও ডালের মিশ্রণকে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। এবং অবশিষ্ট তেল মসলার মধ্যে দিয়ে একটু নাড়তে হবে যাতে নিচ থেকে মসলা পুঁড়ে না যায়। এরপর এতে আমের আচার ১.৫০ টেবিল চামচ দিতে হবে, তবে এখানে আমের আচারের পরিবর্তে জলপাই আচার ব্যবহার করা যাবে।
এবার দিতে হবে কাঁচা মরিচ ৫-৬ টি ও চাল ও ডালের জন্য স্বাদমতো লবণ। কারণ মাংসের মধ্যে পূর্বেই লবণ দেয়া হয়েছে। তারপর মিডিয়াম আঁচে এগুলোকে নেড়ে ছেড়ে কিছুক্ষণ ভেঁজে নিতে হবে। কিছুক্ষন ভাঁজার পর এগুলো থেকে যখন একটা পটপট আওয়াজ আসবে এবং কালার পরিবর্তন হবে, তখন এতে যতটুকু চাল নেয়া হয়েছিল তার ডাবল গরম পানি দিতে হবে।
অর্থাৎ ২ কাপ চালের জন্য ৪ কাপ পানি এবং পৌনে ১ কাপ ডালের জন্য ১.৫০ কাপ পানি দিতে হবে। এখানে গরম পানি দেয়ার ফলে খিচুড়ি নরম হবে না। এবার চুলার আঁচ হাইতে দিয়ে বলক আসা পর্যন্ত ৪-৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এরপর এগুলোকে নেড়ে দিতে হবে। যখন চাল ও পানি সমান হয়ে আসবে তখন এতে উঠিয়ে রাখা মাংসগুলো মসলাসহ দিতে হবে।
এরপর মটর শুঁটি পছন্দমত, কিছু কিসমিস, ফ্লেভারের জন্যে আস্ত কাঁচা মরিচ ৫/৬ টি, পেঁয়াজ বেরেস্তা পছন্দমতো এবং ১ টেবিল চামচ ঘি দিয়ে আলতো করে চারপাশ নেড়ে লো আঁচে ২০ মিনিট ঢেকে রান্না করতে হবে। তবে এই ২০ মিনিটের মধ্যে অবশ্যই ঢাকনা তুলে ১ বার উল্টে পাল্টে নেড়ে দিতে হবে। এবার ২০ মিনিট পর নেড়ে ছেড়ে খিচুড়ি নামিয়ে ফেলতে হবে। এরপর একটি প্লেটে সুস্বাদু ঝরঝরে আচারি চিকেন ভুনা খিচুরি পছন্দমতো পরিবেশন করতে হবে।