বাংলাদেশে রয়েছে নানা ঐতিহ্যবাহী পিঠা। তার মধ্যে একটি মজাদার আঞ্চলিক পিঠা হলো বিবিখানা পিঠা। রাজকীয় এই পিঠার যেমন নাম, তেমন তার স্বাদ। রাজকীয় এই সুস্বাদু বিবিখানা পিঠার নামের সাথে কোন বিবির ইতিহাস জড়িত তা জানা যায়নি। তবে বাংলাদেশে এখনও টিকে আছে রাজকীয় এই বিবিখানা পিঠা।
প্রচলিত তথ্য অনুযায়ী, রাজা বিক্রমাদিত্যের সময় থেকে এই পিঠা চালু আছে। প্রথমে ফরিদপুর, শরীয়তপুর এবং ঢাকার বিক্রমপুরে থাকলেও পরবর্তীতে এই পিঠা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে বাংলার ঘরে ঘরে মুখরোচক এই বিবিখানা পিঠা প্রচলিত।
মজাদার এই বিবিখানা পিঠা ঘরে থাকা উপকরণে খুব সহজেই বানিয়ে নেওয়া সম্ভব। চলুন, তাহলে জেনে নেয়া যাক কীভাবে ঘরেই তৈরি করবেন সুস্বাদু বিবিখানা পিঠা।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- চালের গুঁড়া : ১.৫০ কাপ
- ময়দা : ১/২ কাপ
- বেকিং পাউডার : ১ চা চামচ
- লবণ : ১/৪ চা চামচ
- ডিম : ২ টি
- ঘি : ১/৪ কাপ
- খেজুরের গুঁড় : ১/২ কাপ
- চিনি : ৩ টেবিল চামচ
- ঘন দুধ : ১ কাপ
- ফ্রেশ নারকেল : ১/২ কাপ
পড়তে পারেন
বিবিখানা পিঠা তৈরির প্রস্তুত প্রণালী –
বিবিখানা পিঠা তৈরির জন্য, প্রথমে একটি বড় বাটিতে শুকনো উপকরণ গুলো মিশিয়ে নিতে হবে। এজন্য বাটিতে চালের গুঁড়া ১.৫০ কাপ, ময়দা ১/২ কাপ, বেকিং পাউডার ১ চা চামচ ও লবণ ১/৪ চা চামচ দিয়ে ভালোভাবে চেলে নিতে হবে। এখানে ময়দা ব্যবহারের ফলে পিঠা ঠান্ডা হলে শক্ত হবে না।
এরপর পিঠার বেটার তৈরির জন্য, একটি বাটিতে রুম টেমপারেচারের ২ টি ডিম নিতে হবে। এবার এতে ঘি ১/৪ কাপ, খেজুরের গুঁড় ১/২ কাপ এবং চিনি ৩ টেবিল চামচ দিয়ে ভালোভাবে মিশাতে হবে। এখানে খেজুরের গুঁড় ব্যবহারে পিঠায় কালার সুন্দর হয় এবং ফ্লেভার ভালো আসে।
এরপর ফ্রেশ নারকেল কুঁড়া ১/২ কাপ দিয়ে মিশাতে হবে। এতে ফ্রোজেন অথবা শুকনো নারকেল ব্যবহার করলে টেস্ট ভালো হয় না। এজন্য ফ্রেশ নারকেল ব্যবহার করতে হবে।
এবার এর মধ্যে ১ কাপ ঘন দুধ দিতে হবে। এর পরিবর্তে ১/২ কাপ গুঁড়ো দুধে ১ কাপ পানি মিশিয়ে ব্যবহার করা যাবে। যখন সব গুলো উপাদান ভালোভাবে মিশানো হবে, তখন এতে চেলে রাখা শুকনো উপকরণ গুলো দিতে হবে। এখানে শুকনো উপকরণ গুলো চেলে নেয়ার কারণে সহজে বেটারে মিশে যাবে। আর পিঠা তৈরির পর এর ভেতরে কোন দানা থাকবে না। আবারও সবগুলো উপাদানকে খুব ভালোভাবে মিশাতে হবে।
পিঠার বেটার তৈরি হয়ে গেছে, এখন যে বাটিতে পিঠা তৈরি করা হবে তাতে ঘি ব্রাশ করতে হবে। এখানে পিঠা তৈরির জন্য স্টিলের বাটি বা কেক বানানোর ছাঁচ ব্যবহার করা যাবে। এবার সম্পূর্ণ মিশ্রণ বাটিতে ঢেলে দিতে হবে। এখানে বাটির তিন ভাগের দুই ভাগ ভর্তি করতে হবে, সম্পূর্ণ করা যাবে না।
এরপর বাটি ভালোভাবে ঝাকিয়ে নিতে হবে, যাতে ভেতরে কোন বাতাস থাকলে বেরিয়ে যায়। এবং পিঠার ভেতরে কোন বড় গর্ত সৃষ্টি না হয়। এখানে অতিরিক্ত বেটার থাকলে অন্য বাটিতে ঢেলে নিতে হবে। আর বেটারের উপরে নারকেল কুঁড়া ছড়িয়ে দিতে হবে, তবে এটা অতিরিক্ত চাইলে বাদ দেয়া যাবে।
তারপর বাটি ঢাকনা অথবা ফয়েল পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হবে, যাতে ভেতরে পানি ঢুকতে না পারে। তবে ওভেনে পিঠা তৈরি করলে ঢাকনা দেয়ার প্রয়োজন নেই। এবার চুলায় ছড়ানো একটি পাত্র বসিয়ে তাতে একটি কাপড় বিছিয়ে দিতে হবে। এরপর এর মধ্যে স্ট্যান্ড বসিয়ে তার উপর পিঠার যে বাটি সেটা রাখতে হবে।
এখন এর মধ্যে গরম পানি অর্ধেক এর চেয়ে বেশি দিতে হবে। অর্থাৎ এমনভাবে দিতে হবে যাতে বাটির তিন ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত হয়। যদি শুকিয়ে যায় তাহলে পরে প্রয়োজনমত পানি দেয়া যাবে। এখানে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করলে ভেতরে পানি ঢুকে যেতে পারে।
এখন চুলা জ্বালিয়ে প্রথম ৫ মিনিট হাই হিটে জ্বাল করতে হবে। এবং তারপর চুলার আঁচ কমিয়ে মিডিয়ামে করে ঢাকনা দিয়ে ছিদ্র বন্ধ করতে হবে। এখানে নিচে কাপড় ও স্ট্যান্ড ব্যবহারের কারণ হলো পানি যখন ফুটবে তখন পিঠার নিচে গর্ত হবে না। আর পিঠার কালার সুন্দর হবে।
এবার প্রায় ১ ঘন্টা ২০ মিনিট পর পিঠা হয়েছে কিনা তার জন্য ঢাকনা তুলে দেখতে হবে। এজন্য একটি টুথপিক নিয়ে পিঠার মাঝ বরাবর ঢুকিয়ে দিতে হবে। যদি টুথপিক পরিষ্কার আসে তাহলে বুঝতে হবে পিঠা তৈরি হয়ে গেছে। তবে বাটির সাইজ বুঝে সময় কম বেশি লাগতে পারে।
এবার পিঠা নামিয়ে ঠান্ডা করতে হবে। এটা দেখতে অনেকটা কেকের মত হলেও স্বাদ এর থেকে অনেক আলাদা। এখন একটি ছুরি নিয়ে পিঠার চারপাশ ভালোভাবে কেটে দিতে হবে। যাতে সহজেই পিঠা খুলে আসে। এবার পিঠার বাটির উপর একটি প্লেট দিয়ে উল্টে দিলে খুলে আসবে।
এরপর নরম তুলতুলে পিঠার উপরে নারকেল কুঁড়া ছড়িয়ে দিতে হবে। এখন পছন্দমত কেটে সুস্বাদু মজাদার রাজকীয় এই বিবিখানা পিঠা পরিবেশন করতে হবে।